Tuesday 16 December 2008

গৌতমই সর্বহারাদের ঘরামি



বিডিআর্টসে প্রকাশিত  সনেট বিষয়ে চয়নের প্রবন্ধের লিঙ্ক

'রেঙ্গুন সনেটগুচ্ছ' নিয়ে ভয়েস অব এমেরিকার সাক্ষাতকার ২০০৯ সালে

কিছু সনেট পাঠের ভিডিও লিঙ্কসহ পুরো ''রেঙ্গুন সনেটগুচ্ছ'' নিচেঃ

১।




ক তে কপিলাবস্তু
কতে ক্যামেলিয়া কতে কবর
ক্যামেলিয়া কবিতাটি লিখেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবর নাটকটি লিখেছিল মুনীর চৌধুরী
কি নিয়ে লেখা ক্যামেলিয়াঃ নৈর্ব্যক্তিকতা থেকে ব্যক্তিগত
যাবতীয় বাগান-নকশার নির্বান
কবর হল চেহারা হারানোর যন্ত্রনা
ফুল নারী শিশু ও বিস্ময়- না প্রশ্ন না উত্তর

সব ফুল কবরে ঝরে সব কবর বদলায় ফুলে
কিন্তু সব কবরে ফল ধরেনা
জ তে জবা জ তে জ্যোতি
২৬শে মার্চ জ্যোতির বাগানে ফুটেছিল রক্তজবা নয় রক্তবোমা

কপিলাবস্তুর জাতক জানতেন
ক্যমেলিয়া জাতিস্মর হবে কবরে

২।


নীল আশ্বস্ত হয় শুধুমাত্র অন্যান্য নীলে
নীল বদলে যায় আকাশ্চুম্বী বিদ্যুতের নীল
কাতর নীল পূর্ণিমা হেঁটে যায়
বাংলার রাজকীয় বাঘের থাবায়
ক্ষিপ্ত বৈশাখের বিক্ষিপ্ত মহামল্লারে
নীলে নীলে নীল নীলপাহাড়ি মূর্ছনায়
আমার দেহঘড়ির চোদ্দতলায় চোদ্দ নীলের জালা
শিশু নীল সবসময় ঘুমোচ্ছে
নৌনীল ভালোবাসে সাগরে ডুবসাঁতার
তাহলে কোন নীল সবচেয়ে সত্যিকারের নীল
এর উত্তরে নীল রানার বয়ে আনে
মহানীল পদ্মসূত্রের স্লোক
যখন শেষবারের মতন থামে নীল হৃতস্পন্দন
যখন ধনুর জাতক চিৎকার করে ওঠে : নির্বাণ-নীল


৩।


দীর্ঘমেয়াদি
সুদীর্ঘ পুরোপুরি পাস্তুরিত গেরুয়া সকাল
সকালের পেয়ালায়
ফট ফট ফট মাখন রঙের ভুট্টার খৈ
সোনালি কিশমিশগুলো
ভ্রু কোচকায় নরম শীত সূর্যের ছায়ায়
ব্রিওশ পাউরুটির
জিভে পানিতোলা থুতুর ফিশফিশ
শাদা হাতির পাকস্থলিতে
হাতির দাতের রান্নাঘরে
সিদ্ধার্থের মধু চুয়ে চুয়ে মিশবে
অসমীয়াদের বাঙালি খেদাও চায়ে
আমি সুখি : কারণ দুঃখ উধাও মহাদুঃখের মাদলে
বাদলাবাতাস আমার মা বৌদ্ধ পিতা

৪।


রক্তজবারা বিচিত্র নিজেদের রক্তাক্ততায়
রজনীগন্ধারা পবিত্র রাতের নির্লিপ্ততায়
শেফালিরা মুগ্ধ নজরুলের গানের সুরে
কদমেরা হতবাক গ্রীস্মের তাণ্ডবিতণ্ডায়
মহুয়ারা দোলে পাহাড়ের তিন চোয়ানি তালে
বর্ষবরণের খোপায় ঘুরে বেলি হেসেছে
টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে
গোলাপেরা অভিমানের আতরজলে গাঢ়
গাঁদাফুল আমাদের হাসিখুশি সেবিকা দিদি
ঘণ্টিফুল বাতাসে বাজায় স্কুল শেষের ঘণ্টা
তোমরা আমরা সবাই ফুল গোত্রের সর্বহারা পুতুল
চাইলেই পারি নিজেদের সুবাস নিজেরাই নিংড়াতে
মানুষেরা শুধু ফুল থেকে ভিন্ন ধর্ষণে ও সমরে
ফুলদেরও জীবন গড়ায় বিচ্ছেদে ও বাসরে

৫।

পরদেশে প্রবাশে সুতো কাটছে তিব্বতী চরকা
হিমালয় গলছে পুর্ণিমার প্রাচীনতম ঝরকায়
কুয়াশার আঁচলে দীর্ঘনিঃশ্বাসের জমিনে
একের পর এক প্যাগোডা জ্বলে ওঠে
যদিও জ্বলবার কথা ছিল না
এমনি মরণবাণ হেনেছিল চৈনিক লাল ফৌজেরা
ধর্মশালায় ঐ ভিক্ষু ভিক্ষুনীদের ভিড়
তারাদের বাস্তব রূপকথায় ত্রিপিটকের ভেলা
ভেলাগুলো কালবেলার কুমার কুমারীদের বাহন
লেজ আঁশ কানকো দাঁড়াসহ ওরা কখনো মাছ কখনো মানুষ
আর ওদের পূর্বপুরুষ পূর্বরমণীরা
ইতিহাসের ডুবসাতারে ভাসবার আগে অস্ফূটে বলে
শরণাং গচ্ছামি : গৌতমই এখন সর্বহারাদের ঘরামি

৬।


ঘুটঘুটে অন্ধকার এক রেস্তরায়
খাদ্যের পরিবেশক ও পাচক সবাই অন্ধ
মেনুতে সব দেশের সব রকম খাদ্য
মসলার বদলে অনুপান হল অনুভূতি
জাফরাণ-অনুভূতি, দারুচিনি-অনুভূতি
পুদিনা-অনুভূতি, রংধুনু-অনুভূতি…
পাচক আসলে পাকাতে চায় খদ্দেরদের মাংস
কিম্বা খদ্দেররা এরি মধ্যে পরিণত খাবারে
ঘরে বাইরে খাদ্যগুলো এখন খোদক
হজমির অষুধ দেবে বোধিসত্যের নির্মোক
গোধূলিমাখা বিচিত্র বকুলের সালাদের পর
চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের নেতৃত্ব দেয়
পরমের গেরুয়াধারীরা। রংধনু এখন রেঙ্গুন।
রেঙ্গুন ক্রমশ গড়ায় নির্বাণের রেস্তরায়

৭।


আমাকে খুন করে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে
রেঙ্গুন নদীতে : আমি ডুবে যাচ্ছি
আমার নির্ভার গেরুয়ার ভারে
প্রতিবেশীরা ঘুমিয়ে পড়েছে নদীর তলায়
যাতে আমার শরীর না ছোঁয় যন্ত্রণার পাতাল
আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে
জলচরেরা জিভ ছোয়াচ্ছে নির্বাণের প্রথম সিড়িতে :
বন্ধুবৎসল শুশুকের ঝাঁক
আমার শ্বাসপ্রশ্বাস বয়ে নিচ্ছে
ওদের ওপরগামী ফিরতি সাঁতারে
প্রত্যেক জলচর প্রাণ শঙ্খনাদে হেসেছে
আমার উভচর অরহৎ দোলুনীতে
আমি ডুবে যাচ্ছি : আমাকে খুন করে
ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে রেঙ্গুন নদীতে

৮।


নির্বাসনে যাই আনন্দের পানশালায়
আজলাভরে পান করি সূর্যমুখীর রেণু
সূর্যরসে টইটম্বুর হবার পর
দেখতে পাই আমি পুরুষ কিন্তু স্পর্শকাতর
এবং অক্টোবর বীর্য খালাশের মাস
হরিণীরা সঙ্কেত পাঠাবে হরিণদের
ধাওয়া পালটা ধাওয়ার আদুরে ভঙ্গিতে
তাড়িত হরিণীরা ভান করবে পালানোর
কিন্তু আড়াল নেবার কোনো তোয়াক্কা করবে না
শান্তিনিকেতনে ও সুন্দরবনে
হরিণ-হরিণী মিলিত হবে চাঁদের বাগানে
বুদ্ধসঙ্গমে হরিণ হরিণী যখন ভরপেট
মিতকথনের মলাটে ছররা হানে ঘাতকের বেয়নেট
হরিণশাবক তখন লিঙ্গনিরপেক্ষ হরিণা

৯।

ভাঙ্গা আয়নার ভাঙ্গা কাচগুলো মোজাইক বেধেছে
মেঝেতে ছড়ানো স্ট্র্যপছেড়া শত শত স্যন্ডেলে
ছেড়াখোড়া লেপ তোষোক বালিশে
দোমড়ানো টিনের ট্রাঙ্কে আরাধনার অনুপানে

সেমিলিং থেকে রেঙ্গুনে ভায়া ভামিয়ান
তালেবান ডিনামাইটে ভাঙ্গে অতিষের অভিমান
মাওয়ের কদাচারে থমকায় সপ্তরষি সঙ্ঘের চাকা
আমরা বোকা নই আমরা অধিকার বুঝি
পরমের দৈববানি বা নেতার তত্বসমাধান নয়
ধরমের শেষ অহিংষার শক্তিমত্তায়

জয় হাসে জ়েলখানায় পথে ঘাটে কারখানায়
জাতকার জিবন্ত মন্দিরে
যে আমাদের মারে শ্মরন তাহাকেও পুনর্জিবন দিবে
মহাজিবনের উপবাসভাঙ্গা উল্লাসে

১০।


আঙ্গুলগুলো সাদাকালো মহাস্থান গড়
গড়খাই ধরে এগোতে এগোতে মগজে ম্য্যরিলিন মনরো
কেন যে সে নাভির চারপাশে
গন্ডারের শিং আর পিরামিড একেছিল কে জানে
আসলে ও ঐসব কিছুই আকে নাই
কোমরের বাকে শুধু চেয়েছিল গৌতমের গোপন
বিয়া ছাড়া কারো সাথে শোবনা
শিশুকালে এ-ঘোষনা দেবার পর

ম্যারিলিন এরে ধরে তারে ছাড়ে
মরন খান্ডবে সহজিবনের বরকত বাড়ে
আমার যৌবনপ্রাপ্তি হইল আমি বার্ধক্যে চিত
ম্যারিলিন আমার আত্মার বৌ বির্জপাত আচম্বিত

পাপড়ির মাশকারা কোমরের বাকে তোতলায়
ও শোনালি ও পূর্নিমা ওরে ও মারকন্যা ম্যারিলিন

১১।


ক্লিয়পেট্রা ছাগলের দুধে গোসল করত
আর শাক্যমুনি হিমালয়ের গোড়ায় ছাগল চরাত

পিরামিডের ভেতর আমি হিমালয়কে ঢোকাব
বুড়িগংগা নীলনদ টেমস সেন ধরে
এরকম সব উদ্ভট মন্ত্র জপবার পর
ঘরের ভেতর ঘর হল মশা থেকে বাচবার মশারি
মশারির তলে সিজারের এন্টনির ঘরনি হলে
চামড়ার চেকনাইর মালিক শাক্যমুনির দেখা পেলেনা
নাকি পেলে? আংটির বিষে?
বিষে বিষে বিশক্ষয় বিষ গড়ায় মরনের মঙ্গায়

বিষের বিলাপ জমে তালগাছকাটা ডোঙ্গায়
উধ্বত মহিমার তোবড়ানো মমিতে
মিশরের মহারানি গোলাপে গড়ায়
আর শাক্যমুনি গোলাপ বাগানে ছাগল চরায়

১২।

হাতুড়ি বাটাল ছেনির পয়মন্তরা
মার্বেলে বন্দী ভাশকর্জের অন্তরা
মুর্তিমতি মুর্তিমান পলাতক মানবি মানব
মাইকেল এঞ্জেলোর ঘটকালিতে বিয়ে বসে দেবদুতি ও দানব

পাহাড়ে নামে ধ্বস অরন্যে দাবাগ্নি
অক্টোপাস দেয় নিজমুখে মুখাগ্নি
মরা জেলেদের মাথায় মরা মাছের পোনা
সিস্টিন চ্যাপেলে মাইকেল আকে নগ্নতার আল্পনা

জঙ্গম তাড়নায় মগ্ন উদ্বাস্তু আদম হাওয়া
যুক্তির পেছনে জন্তুর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
রং তুলিতে একাকার আকিয়ের শরির পাতন
মাইকেল এঞ্জেলো কি পায় স্মরনের মন্ত্র সাধন

শতবার বলা কথাগুলো আর বলবনা
সিস্টিন বেদিমুলে সবাক বুধ্বেরই আসমানী জল্পনা

১৩।


ব্রিটানির মরবিয়া উপকুলে পেনলা বন্দরে
জেলে নৌকাগুলো অপেখ্যা করছিল সান্ধ্য জোয়ারের
আকাশ উজ্জল মাসটা ডিসেম্বার
দশদিনে একদিন এরকম আবহাওয়া মেলে

কনকনে শীতের বাতাসে আটলান্টিকের শো শো
পাথুরে তীরে টনে টনে শামুক শঙ্খের খোল
খাজে খাজে বন্দী সাগুরে কল্মির কালচে লতারা
লোকজ়ন হাটছে শিশুরা খেলছে

বালীয়াড়িতে রেখা একে
শিশুদের বল্লামঃ এটি আমার দেশের মানচিত্র
সাগর ফেনায় সে মানচিত্র হারনোর আগে
জানালাম আমি জন্মেছি ঐ বাংলাদেশে

প্যস্টেলে আকা সন্ধ্যার সাবলিলতায়
স্থানিয় শিশুরা জিবন বদলালো বঙ্গোপসাগরের দোলায়

১৪।

প্যারিসের মিরাবো সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে
কবি আপোলিনেয়ার যে প্যারিসকে দেখেছিলেন
সে-প্যারিসের হৃদয়ে বিধেছিল
তার মাথার খুলিতে আটকানো স্মরনবোমার টুকরো

বির হাকেম সেতু হয়ে আইফেল থেকে মিরাবোতে
যুদ্ধজয়ের স্মারক স্তম্ভগুলো চমকে ওঠে
যতিহিন কবিতার সবাক গতিশিলতায়
বৃষ্টি হলে ছাতা খুলতে নেই- বৃষ্টি সবুজকে ভেজায়

বুদ্ধের অবতার গিয়ম আপোলিনেয়ার য্যমন
আমাকেও তেমনি প্রায়ই বাধ্য করা হয়
আত্মার স্বাধিনতাকে বিস্বাসে বদলাতে
মগজে টের পাই না-ফোটা স্মরনদের

সকল তির্থের শেষে মিরাবোর পাশে যাই
অস্তিত্বে উদ্বোধন ঘটাই লালন ও সিরাজ সাইর

১৫।

মসলা-সড়ক সিল্ক-সড়ক কত রকম সড়কের নাম
শের শাহ সুরের গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড

থমকায় তা চিটাগাং বন্দরে খালাশিটোলায়
ইস্তাম্বুলি উদর-নর্তকির রঙ্গিলা ঘাগ্রায়

নদি ও আকাশ ধরেও ্যেতে পার
গুহাচিত্রে প্রেমসুত্রের কারথনায়

হাটুরে মাছেরা দাড়া খসিয়ে হাতে তুলেছিল
শিকারের বল্লম- রুস্তমের হাতে নিহত সোরাব

সড়ক থেকে মহাসড়কে বাতসল্যের মড়কে
পুত্রহারা মায়ের বিলাপ তিব্বতি মগ্নমালিয়ায়

পাহাড়ি সড়ক ধরে পাহাড়তলির ফিরিঙ্গি ক্লাবে
সত্যাগ্রহি প্রিতিলতা হেটেছিল শহিদি সড়কে

জিহবায় বিষের কামড় পাপড়িতে কলিঙ্গের শোক
অশোকের হিশাব বদলায় বোধিস্বত্বের দানপাশায়

১৬।

তেনজিং নোরগের মুর্তিকে পিছে রেখে
কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সুধিয়েছিলাম কোন দেশিরে তুই
ঃসংবতসর নিরুদ্দেশ , প্রেমখালাশে বাংলাদেশি
যৌনবিলাসে তুই নারি না নর এ প্রশ্ন করতে
আমার মুখ চেপে ধরেছিলি উরুর জোড়ায়
ওখানে লিঙ্গের বদলে ডানা
ভালবাসার উতরাইর নাই কার্জকরনের সাথে বনিবনা
রক্তের কনায় পার্বতি প্রলাপের মন্ত্রনা

আমাকে খুন করে
আমার লাশ আমারি ঘাড়ে চাপিয়ে
গুম করেছিলি ঘুম পাহাড়ের ঢালে
কামড়াকামড়ির শিতল দাগ বিছ্যেদের সুরতহালে

অভিশপ্ত তাড়না অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা তুই
হাতের মুঠোয় চোখ বোজে গরম গরম নেপালি ভাটুই

১৭।

পুতুলদের বিয়ে বিয়ে পুতুলদের বিবাহ বিছ্যেদ
খেলাছলে সরোদের নক্সা করেছিল আলাউদ্দিন খান

রাগ বেহাগের সেতু ধরে ভৈরবে মেঘমল্লারে
১৯৭১এ বাংলার ধুন ম্যাডিসন স্কয়ারে

আলি আকবর খান টুং টুং টুং
যখন টুং টুং টুং তখন আমি ছয় বছরের শিশু

মা’র পায়ে ফোস্কা, কখনো আব্বার কাধে চড়ে
কখনো নৌকায় পালিয়েছিলাম জন্মের শহর ঢাকা ছেড়ে

ইলিশদের বিয়ে বিয়ে ইলিশদের বিবাহ বিচ্ছেদ
ইলিশদের পতাকা আছে ইলিশদের বিজয় দিবশ

পুতুলের সাথে ইলিশের সম্পর্ক হাজার বছরের
তেতুল গাছের পুতুল চায় ইলিশের ভাজা পেটি

মায়ের তেতুলে ফিরবার সময় পুতুলেরা তড়পায়
ঘেরজাল পার হয়ে প্রান ফিরে পায় অতিশ দিপঙ্করে

১৮।


দৌলতদিয়া ঘাটে ডূবে মরবার আগে
ক্লাচে গিয়ারে পানির তোড়ের ফাদে আটকানো
আলমগির কবির কি মৃত্যুকে পেরোতে পেরেছিলেন
অধ্যত্মের কার্জকরন পদার্থ বিজ্বানের বৈরী
কবিরের ছবিগুলো অস্টশিলার অনিবার্জতায় তৈরী
শহিদ মিনারের সামনে মাথায় ফেট্টি বাধা
প্রভাত ফেরির মাঝখানে শয়ান ক্যমেরার কোণে
ও ছিল শোকজাত্রার মাতাল রিত্তিক

মেঘলা এনভেলাপে মেঘছোয়া মুখগুলো লিংগবিহীন
আকস্মিকতার জন্য সঙ্গম ও মন প্রস্তুত নয়
যে পুজারি সেই কি তবে প্রকৃতির হন্তারক
দুর্ঘটনায় মৃত্যু অত্যন্ত যন্ত্রনাদায়ক

পদ্মার ফেরিঘাটের একপার আলমগীর কবিরের নামে
অন্যপার অভিনেত্রী টিনার সম্মানে অমর হোক

১৯।

রুপ জাগে সকাল ও সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরীর ঢাকায়
ঘাম জবজবে ঠোলা ও ঠেলাগাড়ি পাশাপাশি হেটে যায়

রুপ জাগে তাতির হাটে তাতিবাজারে তাতি নাই
আছে শোনার আর রুপার কারিগর

ঘরভর্তি বট আর তক্ষকের শেকড় ছড়ানো
বুড়ো আঙ্গুল কাটা প্রপিতামহি তাতিনীদের মহিমা

বুড়িগঙ্গার বিশাক্ত কাল জলে
প্রলাপি পাশান থমকায় গোলাপী আহসান মঞ্জিলে

লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গের ওপারে
সোয়ারিরা চলে গেছে সুর্জাস্তের সোয়ারিঘাট ছেড়ে

পরীবিবিকে নাইয়র নিতে
ভৌতিক বেহারারা জাগে বধ্যভুমিতে রায়েরবাজারে

বালকেরা বালিকারা ইস্কুলে যায়
গারমেন্টস বিরাংগনারা জাগে কামরাংগীর চরে বাশের বেড়ায়

২০।

মহাদান মহাসাদায়
মহাপ্রানের রাজহাস রাজহাসি
পালখের আড়ালে লুকায় পাথরের অভিমান
মুর্তি স্থানান্তরের প্রতিবাদে তুমি ধরো
মানব শেকল আর ঘরকন্যার কান্নায় থাকো নিশ্চুপ
ভেজাচোখ মোছবার আগে বারবার তার বস্রহরন

পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা অনাত্মীয়তার অনাচার
আত্মার থুতুতে গিলে
যদি ঐ বালিকাটি ফেরে অন্ধ মুখ ও বধির
সব গৌরব ব্র্যর্থ হবে

নোংগোরের নোনায় খাবে আবদালির রাখি
মুর্তিদের ইতিহাস শুভঙ্করের ফাকি

তীর্থঙ্করের হেট মাথা
পুজারিনীর অশ্রধ্যায়

২১।

বাঘটার গলা কাটা কুমিরটার মাথা ফাটা
গোলপাতারা ডূব দিল সাগরের পাতালে
পচ্যাব্দি গাজির ভুত ঐখানে কানামাছি খেলে
আকাশ থেকে ছোড়া রিলিফের চাল গম তেলের বস্তা
আমার ঘাড় মটকে দেবার পর প্রকৃতি আর ধাত্রি নয়
ইব্লিশের সেবিকা সে কুত্তি কাহিকা
না হয় কিভাবে চড়লে ঘুর্নি ঝড়ের মগডালে
হাকলে বাঘের চেয়েও শক্ত থাপ্পড় বাঘদের গালে

কুমিরের পেট চিরলে কুমিরের চেয়েও ধারাল করাতে
শক্তি দেখে থ তবু চোখে লালসার প্রপাত
তবু আমি চাই দানবির সাথে বুধ্বের সঙ্গম
আত্মবলি ছাড়া থামবে না জানি দানবির জঙ্গম
কলির গ্রাহক আমি- বলির বেদীতে করি কন্ডমের
যোগাড়জ়ন্তর ঃ জয় সুন্দরিবিবি জয় চাদসুন্দর

২২।


বানরেরা শুনো মনজ়োগ দিয়ে
আর সপ্তার বুধবার গৌতমের বিয়ে
আগে থাকে রবি সোম মঙ্গল
জমিতে নাচাও বৈঠা পানিতে লাঙ্গল

পরে থাকে বিশ্যুধ শুক্র শনি
চিন্তা নিবে ছুটি খেলবে কল্পমুনি
ধ্যনের গিরায় ফাশে বর্নাশ্রমের চল
মিত্র আমার বন্ধু সঙ্ঘ আমার কল

কথ্য অকথ্য যন্ত্রনার জ্যমিতিপাঠ শেশে
গৃধ্রকুট পাহাড়ের পাদদেশে
নেমেছিল গোপনীয়তায় গোমরানো লাভা
৭ই মার্চ ১৯৭১ আম্মার উঠানে মুজিবের সভা

যারা এসেছিল তারা স্বাগত
যারা আসেনি তারা বিগত

২৩।


কার্পাস তুলা আর ঘাসেদের প্রশ্ন সুধোতে
খনা দেখতে এরকম ছিল বলে খনার আদলে আরেক বালিকা
হাটুজল পাটের খেতে ফ্রক উলটে দেখিয়েছিল
খনার তলপেটে রংধনু রঙ্গা মাস কলাইয়ের খেত
শ্রাবনধোয়া আকাশে পরতের পর পরত
বৃষ্টির ব্যন্ডেজে জড়ানো শুবচনের মমি
সুলক্ষনা না কি কুলক্ষনা
জানবার আগে ঠা ঠা ঠা ঠান্ডা মাথার ঠাডা
বানে ডুবলো বিজধানের বিজতলা
সাপে দংশালো প্রসাদের দুধ কলা
খরায় চৌচির মরাকোটালের টেরাকোটা ট্যবলেট
চৌচির ধানখেত চৌচির গান চৌচির কিষান
কিন্তু খনা এখন আবার সন্তানসম্ভবা
আবার মুখ খোলে বাতিল যত জনসভা

২৪।

মানুষজ়ন দেয়ালে ছবি ঝোলায়
মানুষজন দেয়ালে ঘড়ি ঝোলায়
কতরকমের ছবি- নিজের ছবি অন্যের ছবি
জিবজন্তু জলজংলা কত কি হাবিজাবি
মানুষজন আছে ্যাদের ঘরবাড়ি নাই
বানভাষী উদবাস্তু কিম্বা ভবের হাটের খদ্যের
আবার অনেক ঘরবাড়ি আছে
যেখানে মানুষজন নাই শুধু ঘড়ির টিক টিক

ঘড়ি সাকার না নিরাকার এ-তর্ক অযথা
একদল ঝোলানেওয়ালা অন্যদলে নাই নাই মামলা
সে-মামলার বাদি চাদ সুরুজ গাছ গাছালি
সংসারের তাবত ক্যমেরাবন্দী হেয়ালি

হেয়ালিতে জিতে গিয়ে আমি করি নিজের বিচার
জড়জিবনকে লটকাই ্যাবতজিবনের দেয়ালে

২৫।

পথ ভুলেছে পথের গন্তব্য
জন্তুর বদলে সে জড়জিবনের বাস্তব্য
অর্থাত মানুষ হবার বদলে সে কাঠের আসবাবপত্র
জিবানুর প্রানপঙ্কে বিকাশ তার সর্বত্র

তারমানে তার চেহারা নাই
জাত্রার শরুতে সে ছিল আজিব এবং অজড়
স্মরন ছিল তার বিস্মরনের শুন্যতায়
সুখি ছিল কারন দুখ্যের শুরু ্যাত্রায়

পথ বদলে সে বায়ে ডানে পেছনে সামনে
পাতালে উড়ালে কোথাও যায়নি থেমেও থাকেনি
মগজ কুরে কুরে নারকেলি সঙ্গমে
সে মরেছে রেশম জড়ানো সিল্কের বিপন্নতায়

এখন সে পোকা
এখন সে প্রান ও রোদ চশমা

২৬।

শব্দরা ধরতে পারবে নিশব্দের ঘুমন্ত চিবুক
আমিও পারব নাকি পারবনা
পারব কারন ওতো শুয়ে আছে আমারি পাশে
জিব থুতুসহ কবিতার অবসর নিবাসে

ও আড়মোড়া ভাংতেই ওকে কুমোরপাড়ায় পাঠাই
দূর থেকে দেখি শরির কেমন নরম ভাবে
আদল পাছ্যে ঘুমন্ত কুমোরদের নরম কাদায়
শব্দরা বোধমন্ত্র কুমোরের অন্ধ চাকায়

স্বাধিকারে গতি বাড়ে শব্দদের
জন্মান্ধ শানায় তার অন্ধকারের অধিকার
মতশোকুমারির খোজে অতলে ডোবে পরিদের কুমার
পরি ছুয়ে হাসে নৌকার গলুই

গলুই গলে রাতা মোরগটি সকাল নিয়ে আসে
শিমুল তূলোর মাখনে মুরগি ছানারা চিক চিক চিক

২৭।

এখানে ফাল্গুনের কোনে শীতশেষ কাপনে
ভাড়িভরা তাড়ি গ্যজায় ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানে
ওখানে স্কটল্যন্ডের জলপ্রপাত ধোয়া ঝরনায়
ওকের পিপায় মজে সোনালি স্বার্বভৌম হুইস্কি
আঙ্গুর চিপে ফরাসিরা বের করে সুরজের রস
ওয়াইনের ভিয়ানে ভাজে স্যলমনের গোলাপি পেটি
কর্নফুলির মহুয়া মদিগ্লিয়ানিতে মজবার আগেই
রুপচাদাদের আশে ঝলসায় মোল্লামির মায়াজাল

সুধাপায়িদের দূরে ঠেলে দিতে দিতে
স্তন্যদায়ি গাইয়ের ওলানও মুখবুজে যায়
সাওতালদের পানশালাগুলো্ সাওতালদের উঠোনোগূলো
ছোট হয়ে আসে রবীন্দ্রনাথের শান্তি-নিকেতনে

অথচ এক সময় সুন্দরবন থেকে ওয়ারি বটেশ্বরে
বাংলার হেশেলে সুধা ছিল সবুজের নিতবৌ

২৮।

আমি তন্ত্রে গমন করি
নারি করে নারিতে পুরুষ অপর পুরুষে
নারি কখনো পুরূষে সন্তান জন্মদানে
শরীর কিন্তু খন্ডকালিন অবসর বিনোদন নয়
বরং পুরোপুরি জিবনজাপনঃ একলা একলি থেকে
বেনামি ভিড়ের মিছিলে বহুগমন

ফুটবার চেশটায় শাপলাদের শালুকে পিড়াপিড়ী
চেহারার চেষ্টায় তারাদের হাত ধরাধরি
চাদের সাথে বিষাদের বুড়ী ছোয়াছুয়ি
স্বপ্নের গবেষনা ভাঙ্গে আকাশনিল জেলখানায়
ইবাদতের অস্থিরতা জ্বালায় আত্মার মরিচবাতি
ঝিলিক ঝিলিক ঝাঝালো তারাদের মহাদেশে
আলোগুলো থেকে যায় তারাদের ঝরবার পরে

তারাদের তন্ত্র আমাকে স্বতন্ত্র করে

২৯।

এক সময়কার আদর্শ মধ্যবিত্ত পাড়াটিতে
আশি থেকে পানির সংকট আর বর্শায় জলাবধ্বতা
জাবেদা খাতায় বিয়োগের খাতে আত্মীয় কুটূম্বিতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুধ্যের বিমান সেনা
বাংলাদেশ বিমানের যান-প্রকৌশলের ম্যনেজার
ভদ্রলোকটি অবসরভাতার সাথে মুদ্রাস্ফীতির
কুস্তাকুস্তিতে একবার খুললেন প্রেস
একবার মুদি দোকানঃ বরাত কিন্তু খুললনা
শেষ শবেবরাতের রাতে আবহাওয়া-বিধ্বস্থ সিথানে
আঙ্গুলগুলো সোদা গন্ধের এক দিন পঞ্জিতে লিখল
"হাজার রজনিতে আমি মাছের সওয়ার।
শিকারের অধুনা সংস্করণ হছ্যে সাক্ষাতকার।
সাক্ষাতকারের পরমে ব্যক্তির উধ্বার গৌতমে,
আর সমাজতন্ত্রে উধ্বার বিড়ম্বিত সামাজিকতার।"

চয়ন খায়রুল হাবিব

সেপ্টেম্বার ২০০৭-মার্চ ২২০৮
লন্ডন ও ব্রিটানিতে লেখা